অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নিল বন্দির সমুদ্র সৈকত। অস্ট্রেলিয়ান পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, এই হামলায় এখনও পর্যন্ত অন্তত ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২৯ জন। আহতদের মধ্যে রয়েছেন দুই পুলিশ কর্মকর্তা, যাঁদের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানানো হয়েছে। পরিস্থিতির গুরুত্ব বিচার করে সিডনি পুলিশ আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘটনাকে “জঙ্গি হামলা” হিসেবে ঘোষণা করেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, হামলার সময় একাধিক বন্দুকধারী এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে। তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোটা এলাকায়। সাধারণ মানুষ প্রাণ বাঁচাতে যে যেদিকে পারে ছুটতে শুরু করেন। মুহূর্তের মধ্যে এলাকায় জরুরি পরিষেবা মোতায়েন করা হয়। হামলার সময় এক হামলাকারী পুলিশের পাল্টা গুলিতে নিহত হয়, অন্য এক বন্দুকধারীকে জীবিত অবস্থায় গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃত হামলাকারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনার পেছনের নেটওয়ার্ক ও উদ্দেশ্য জানার চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।
এই রক্তাক্ত ঘটনায় নিহতদের মধ্যে একটি ইহুদি স্কুলের এক শিশুও রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এই খবর সামনে আসতেই শোক ও ক্ষোভ আরও গভীর হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে দাবি, হামলার এলাকায় একটি ইহুদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকায় বিষয়টি আরও সংবেদনশীল হয়ে উঠেছে। অনেক শিশু এখনও তাদের বাবা-মায়ের খোঁজে রয়েছে। হাসপাতাল, পুলিশ স্টেশন ও অস্থায়ী সহায়তা কেন্দ্রে প্রিয়জনদের সন্ধানে ভিড় জমাচ্ছেন উদ্বিগ্ন আত্মীয়রা।
হামলার পরপরই সিডনির বিভিন্ন হাসপাতালকে সর্বোচ্চ সতর্কতায় রাখা হয়েছে। সরকারি সূত্র জানাচ্ছে, অন্তত ২০ জন অভিজ্ঞ সার্জনকে নিয়ে পাঁচটি আলাদা মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি বহু প্যারামেডিক ও জরুরি স্বাস্থ্যকর্মী রাতভর আহতদের চিকিৎসায় নিযুক্ত রয়েছেন। হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারগুলোতে একের পর এক জটিল অস্ত্রোপচার চলছে। চিকিৎসকদের কথায়, অনেকেরই অবস্থা অত্যন্ত সংকটজনক, ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ঘটনার পর সিডনির ওই এলাকা পুরোপুরি ঘিরে ফেলা হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী প্রতিটি কোণায় তল্লাশি চালাচ্ছে, কোথাও আরও কোনও হামলাকারী লুকিয়ে আছে কি না, তা নিশ্চিত করার জন্য। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে বেশ কিছু রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের ঘরের ভিতরেই থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার রাজনৈতিক মহলেও এই হামলা ঘিরে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। দেশটির শীর্ষ নেতৃত্ব এই ঘটনাকে “মানবতার বিরুদ্ধে জঘন্য অপরাধ” বলে নিন্দা করেছেন। সরকারের তরফে নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানানো হয়েছে এবং আহতদের চিকিৎসার জন্য সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপের ইঙ্গিতও মিলেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বজুড়ে যেভাবে জঙ্গি হামলার সংখ্যা বাড়ছে, সিডনির এই ঘটনা তারই ভয়াবহ উদাহরণ। বিশেষ করে শিশু ও নিরীহ সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করে হামলা গোটা সমাজকে নাড়িয়ে দিয়েছে। এখন সবার একটাই প্রশ্ন এই হামলার পেছনে কারা, এবং কেনই বা এত নিরীহ মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়া হল? তদন্ত এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে হয়তো সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর মিলবে। তবে আপাতত সিডনি শোকস্তব্ধ, আতঙ্কিত, এবং একই সঙ্গে ক্ষুব্ধ এই বর্বর জঙ্গি হামলার বিরুদ্ধে ন্যায়বিচারের অপেক্ষায়।
সংবাদ সূত্র ও ফটো ক্রেডিট – কলকাতা ২৪ নিউজ.কম
